ঠাকুরগাঁও থেকে: হিমালয় কন্যা নামে পরিচিত দেশের উত্তরের জেলা গুলির মধ্যে ঠাকুরগাঁও অন্যতম। এ জেলায় ঠান্ডা বরাবরই বেশি। তবে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এখানে সূর্যের দেখা মেলেনি আর সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ৯ এর আশে পাশেই রয়েছে।
তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে একদিকে যেমন বেড়েছে ঠান্ডার প্রকোপ অপরদিকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা। এতে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিনই ৬০ থেকে ৭০ জন শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে । হাসপাতালে ভর্তি শিশু রোগীর প্রায় সবাই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঠান্ডাজনিত নানা রোগে ২৪২ জন শিশু ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৬৫ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৩৭ জন। অন্য শিশুরা ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগী আক্রান্ত রয়েছে।
অপরদিকে হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে হঠাৎ কয়েকগুণ রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় শয্যা সংকটে রোগী ও স্বজনরা। রোগীর তুলনায় হাসপাতালে শয্যা অপ্রতুল্য। একেকটি শয্যায় ৩-৪ জন করে শিশুকে রাখতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও স্বজনরা। অনেকটা বাধ্য হয়েই ওয়ার্ডের বারান্দা কিংবা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলা নারগুণ এলাকার মাজেদুল ইসলাম জানান, তার শিশুর হঠাৎ করে বমি, সর্দি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ও গত দুই দিন ধরে আছেন। কিন্তু হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা অনেক। বেড না পেয়ে তিনি অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে মেঝেতে রয়েছেন। রোগী সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে তার মতো অনেক বাবা মা হাসপাতালের মেঝেতে সন্তানকের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একই কথা জানান সদর উপজেলার চৌধুরীহাট এলাকা থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মা আলেয়া বেগম। তিনি বলেন, আমার তিন বছরের ছেলে ও পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে আমি এখানে মেঝেতে রয়েছি। তাদের দুজনেরই ডায়রিয়া। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে থাকতে হলেও শান্তি পাচ্ছি যে তাদের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু মো. রাজীব উল দোজা (তূর্য) জানান, গত কয়েকদিনে আমাদের এখানে ঠান্ডা বাড়ার কারণে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও শয্যার তুলনায় তিন বা চার গুণ রোগী বেড়েছে তবুও আমরা রোগীদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এখন মাদের একটু সচেতন হতে হবে, শিশুর যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে নজর রাখতে হবে।